♒ সেমিনার রুমে কি ‘অপরাধ’ ঘটেনি? ‘ক্রাইম সিন’ বা অপরাধের জায়গা কি অন্যত্র ছিল? অন্যত্র কোথাও খুন করে নির্যাতিতা চিকিৎসকের দেহ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের সেমিনার রুমে আনা হয়েছিল? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার প্রথম থেকেই সেই প্রশ্নগুলি তোলা হচ্ছিল। যদিও সোমবার শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস যে রায় দিয়েছেন, তাতে ছবি এবং যুক্তি দিয়ে সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন। নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারের তরফে যে অভিযোগ করা হয়, সেটা বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষ্য এবং যুক্তির নিরিখে ব্যাখ্যা করেন বিচারক।
ܫরায়ের কপিতে তিনি জানিয়েছেন, ১৪ অগস্ট সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) বিশেষজ্ঞরা যখন সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন, ততদিনে ছয়দিন (৯ অগস্ট দেহ উদ্ধার হয়েছিল) কেটে গিয়েছিল। যা প্রমাণ আছে, তা থেকে মনে হচ্ছে যে ততদিনে তদন্তের স্বার্থে ওখানে অনেক 'ফুটপ্রিন্ট' (পায়ের ছাপ) পড়েছিল। বেডশিট, কম্বল-সহ সেমিনার রুমে যে যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল, তা ৯ অগস্ট কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা সংগ্রহ করেছিলেন। সেদিনই গদি থেকে তুলোর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফরেন্সিক বিশ্লেষণের জন্য বেডশিট, কম্বল পাঠানো হয়েছিল।
'সমস্ত প্রমাণ খতিয়ে দেখলে সন্দেহের অবকাশ থাকত না'
𒉰সেটার প্রেক্ষিতে কয়েকটি ছবির কথা উল্লেখ করেছেন বিচারক। তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতা চিকিৎসকের মুখ এবং দেহের একাংশ দেখা যাওয়ায় সেই ছবি আগে বাদী ও বিবাদী আইনজীবীদের দেওয়া হয়নি। সেই ছবিগুলি যদি ভালোভাবে দেখা যায়, তাহলে বোঝা যাবে যে নির্যাতিতা যে বেডশিটের উপরে শুয়েছিলেন, তাতে ধস্তাধস্তির চিহ্ন আছে। সমস্ত প্রমাণ খতিয়ে দেখলে নির্যাতিতার পরিবারের তরফে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই বিষয়টা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকত না।
♔বরং একটি ভিন্ন দিক থেকে পুরো বিষয়টি বিবেচনা করে দেখেছেন বিচারক। রায়ের কপিতে তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতা ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকা তাঁর উপরে আক্রমণ করা হয়েছিল। যা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। ফলে প্রতিরোধের ক্ষমতা স্বভাবতই কম ছিল। আসামি যে বলপ্রয়োগ করেছিল, তা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। নির্যাতিতার উপরে যে আসামি ছিলেন, সেটাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু ধস্তাধস্তি হলেও কীভাবে নির্যাতিতার নিজস্ব জিনিস অক্ষত থাকল?
🍸নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী এবং সঞ্জয়ের আইনজীবী যে বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন, সেটাও রায়ের কপিতে উল্লেখ করেছেন বিচারক। তিনি জানিয়েছেন, ছয় নম্বর ছবিতে (ছবি অবশ্যই প্রকাশ করা হয়নি) দেখা গিয়েছে যে নির্যাতিতার মাথার ডানদিকে তাঁর মোবাইল, ল্যাপটপ এবং খাতা পড়ে আছে। সেগুলি পরিপাটিই ছিল, কারণ সেগুলি সমতল পৃষ্ঠে ছিল। তবে যে জলের বোতল ছিল, সেটা ডায়াসের উপরে পড়েছিল।
𝔍রায়ের কপিতে বলা হয়েছে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের হাউস স্টাফ গুলাম আজম যা জানিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে যে গায়ে লাল কম্বল দিয়ে শুয়েছিলেন নির্যাতিতা। পাঁচ নম্বর এবং ২০ নম্বর ছবি অনুযায়ী, এমনভাবে গদির বাইরে ওই লাল কম্বল পড়েছিল, তা দেখে সাধারণ বোধবুদ্ধি সম্পন্ন যে কেউ বুঝতে পারবেন যে জোর করে সেটা কেউ সরিয়ে নিয়েছিল। আর ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
🧸নির্যাতিতার ব্যাগের ক্ষেত্রেও একইরকম কথা বলেছেন বিচারক। রায়ের কপিতে তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতার ব্যাগ যে পরিপাটি ছিল, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ছবিগুলি দেখলেই বোঝা যাবে যে টেবিলের উপরে ব্যাগ রাখা ছিল। তার পাশে ডায়াসের উপরে ঘুমাচ্ছিলেন নির্যাতিতা। সেই পরিস্থিতিতে ব্যাগের উপরে কোনও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ছিল না বলে মনে করেছেন বিচারক।
সেমিনার রুম ছিল ক্রাইম সিন, মত বিচারকের
ꦗরায়ের কপিতে শিয়ালদা আদালতের বিচারক বলেছেন, বিভিন্ন প্রমাণ খতিয়ে দেখে ‘আমার মনে এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে সেমিনার রুম, আরও সুনির্দিষ্টভাবে ডায়াস, আরও সুনির্দিষ্টভাবে ডায়াসের উপরে থাকা গদি এবং সর্বোপরি নির্যাতিতার দেহ ছিল অপরাধের স্থল।’ সেইসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, অন্যত্র খুন করে নির্যাতিতার দেহ আরজি করের সেমিনার রুমে আনার স্বপক্ষে তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।