ফের সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখা গেল মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে। সম্প্রতি নাকি বাংলাদেশ লাগোয়া মংডুর পাশে থাকা মায়াওয়াড়ি ও বুচিডংয়ে হামলা চালিয়েছিল রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন 'আরসা' (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)। গত ৩ এপ্রিলের সেই হামলায় চারজন বৌদ্ধ মগ সম্প্রদায়ের মানুষকে খুন করে রোহিঙ্গারা। এর আগে গত ২৯ ও ৩০ মার্চ মংডুতে আরসার গুলিতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এদিকে গত ২৯ মার্চ আরাকান আর্মিরও দুই সদস্যকে খুন করে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। এই আবহে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পালটা জবাবি হামলা শুরু করেছে আরাকান আর্মি। (আরও পড়ুন: গেরুয়া পতাকা হাতে দরগায় উঠল যুবকরা, পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বার্তা DCP-র)
আরও পড়ুন: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সমর্থন করায় BJP-র সংখ্যালঘু নেতার বাড়িতে আগুন লাগানো হল
আকারান আর্মির অভিযানে গত ৪ এপ্রিল খতম হয় ২ রোহিঙ্গা জঙ্গি। এদিকে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী। সেই স্থলমাইনে নাকি ৬ এপ্রিল পা উড়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিকের। তোঁতারদিয়া সীমান্তে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে সম্প্রতি আবার মায়ানমার সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলাদশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। বাংলদেশের দাবি, সেই সময় নাকি লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সম্মত হয়েছন মায়ানমারের সেনা প্রধান। এর আগে রাষ্ট্রসংঘের প্রধানকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইউনুস। এই সবের মাঝেই ফের একবার রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই আবহে আরাকান আর্মি ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। এদিকে সীমান্তের ওপারের অশান্তির আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশেও। (আরও পড়ুন: ওয়াকফ মামলা নিয়ে মৌখিক আবেদন সুপ্রিম কোর্টে, শুনলেনই না প্রধান বিচারপতি)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের লালমনিরহাটে নাকি বিমানঘাঁটি তৈরি করছে চিন, হুমকির মুখে চিকেনস নেক?
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির শীর্ষ নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি সহ ১০ জনকে। নারায়ণগঞ্জে এক বহুতলের ফ্ল্যাটে আরামে থাকত এই রোহিঙ্গা জঙ্গি। হিন্দুদের উপর নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত এই জঙ্গি নেতা আতাউল্লাহ। তাকে আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন মায়ানমারের হিন্দুরা। ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে উত্তর মংডু এলাকায় খা মউংসিক গ্রামে ১০০ জনেরও বেশি হিন্দুকে মেরেছিল এই আতাউল্লাহ। মৃতদের মধ্যে ২৩ জন শিশু ছিল বলে দাবি করা হয়। (আরও পড়ুন: রামনবমীর মিছিলে ডিম ছোড়ার অভিযোগ মহারাষ্ট্রে, মামলা দায়ের পুলিশের)
এদিকে এর আগে কক্সবাজারের খুরুশকুল থেকে উদ্ধার হয়েছিল মায়নমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির ৬০ জোড়া ইউনিফর্ম। যা ঘিরে চাঞ্চল্য ও কৌতুহল ছড়িয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৩ মার্চ খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া ঘাটে অভিযান চালিয়ে এই সব ইউনিফর্ম উদ্ধার করে ব়্যাব। অনুমান করা হচ্ছে, বিভিন্ন অন্তরঘাতমূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করার জন্যেই এই পোশাক তৈরি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছিল। এহেন পরিস্থিতি রাখাইনে বর্তমান পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পিছনে বাংলাদেশি রোহিঙ্গাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে রাখাইনে জুন্তা বাহিনীর ঘাঁটি নিশানা করে হামলা শুরু করেছিল আরাকান আর্মি। এই আবহে রাখাইন প্রদেশের ১৭টি শহরের মধ্যে ১২টিরই দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি। এদিকে মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এর আগে মংডু শহর দখলের সঙ্গে সঙ্গেই সেই ২৭০ কিলোমিটারের পুরোটাই দখলে চলে গিয়েছে আরাকান আর্মির। বর্তমানে রাখাইন প্রদেশের সিত্তে শহরটি জুন্তার দখলে রয়েছে। তবে প্রদেশের অধিকাংশ এলাকার ওপরই জুন্তার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মাঝে মধ্যেই এয়ারস্ট্রাইক করছে জুন্তা।