মার্শা বার্নিকাটকে বাংলাদেশ নীতির প্রধান পরিকল্পনাকারীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিল ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনিতেই আমেরিকায় একটি সরকারের বদল ঘটলে আমদাদের বদলির ঘটনা স্বাভাবিক। তবে এই বার্নিকাটকে বদলির নেপথ্যে অনেক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞই একটি 'বার্তা' খুঁজে বেড়াচ্ছেন। উল্লেখ্য, এর আগে হাসিনা সরকারের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। হাসিনা বারবার আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এদিকে হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের সরকারের মাথায় বসেছেন 'ক্লিনটন ঘনিষ্ঠ' ইউনুস। আর এই আবহে অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশে পালাবদলের নপথ্যে হাত ছিল আমেরিকার। যদিও আমেরিকা সেই কথা স্বীকার করে না। সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে থাকা জেক সালিভানও ভারত সফর শেষে দাবি করেছিলেন, দিল্লির সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে যে ভারত মনে করে না যে ঢাকার ঘটনায় ওয়াশিংটনের হাত রয়েছে। এই জটিলতার মাঝেই আমেরিকার বাংলাদেশ নীতি নির্ধারকের পদ থেকে অপসারিত বার্নিকাট। (আরও পড়ুন: 🀅আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই, জানালেন ইউনুসের প্রেস সচিব)
আরও পড়ুন: 🦂'কোথায় যাব?', অত্যাচার থেকে বাঁচতে ভারতে, পুলিশের জালে ৭ বাংলাদেশি হিন্দু
এই বার্নিকাট একটা সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আর এখন তিনি আমেরিকার বিদেশ দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল। বার্নিকাট-সহ আমেরিকার বিদেশ দফতরের গুরুত্বপূর্ণ তিন কর্তাকে ইস্তফা দিতে বলেছে ট্রাম্পের শিবির। বার্নিকাট নিজে পেশাদার কূটনীতিক। তিনি ডেমোক্র্যাট ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তবে এর আগে রিপাবলিকান জমানাতে (জর্জ ডাব্লু বুশের আমলে) সেনেগালের রাষ্ট্রদূতের পদ সামলেছিলেন তিনি। এহেন বার্নিকাটকে পদত্যাগ করতে বলে বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প নীরবে বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। (আরও পড়ুন: 🌸সইফের হামলাকারী বাংলাদেশি হওয়ায় তৃণমূলকে ক্ষমা চাইতে বললেন অমিত)
এর আগে নির্বাচনের প্রাক্কালে দিওয়ালি উপলক্ষে বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তিনি লিখেছিলেন, 'অশান্ত বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখানে লুঠপাট চলছে। আমি এর তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। আমি ক্ষমতায় থাকলে, এমন কখনও হত না। কমলা হ্যারিস ও জো বাইডেন আমেরিকায় এবং বিশ্বজুড়ে হিন্দুদের গুরুত্ব দেননি। ইজরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকী আমাদের নিজেদের দক্ষিণ সীমান্তেও বিপর্যয় ঘটিয়েছে। তবে আমরা ফের আমেরিকাকে শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমেই শান্তি ফিরিয়ে আনব। আমরা হিন্দু মার্কিন নাগরিকদেরও কট্টর বামপন্থীদের ধর্ম-বিরোধী অ্যাজেন্ডা থেকে রক্ষা করব। আমরা আপনাদের স্বাধীনতার জন্য লড়ব। আমার প্রশাসনের অধীনে ভারত ও আমার ভালো বন্ধু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক আরও মজবুত করব।' (আরও পড়ুন: ⭕সার্ভার বন্ধ করল ওব়্যাকল, অমেরিকায় আর চলছে না টিকটক, চিনা সংস্থা বলল…)
ꦇএদিকে মহম্মদ ইউনুস 'ট্রাম্প বিরোধী' হিসেবেই পরিচিত। মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে তিনি অস্বস্তিতে আছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মদম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সুসম্পর্কের কথা অনেকেই জানেন। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প জেতার পরে প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে ইউনুস বলেছিলেন, 'ট্রাম্পের এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে। তা যেন আমাদের গ্রাস না করে, আত্মশক্তিকে দুর্বল না করে দেয়।' আর পরে যখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিল, তখন নাকি ইউনুসের নাম না নিয়েই ট্রাম্প বলেছিলেন, 'ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।' উল্লেখ্য, সেবার ট্রাম্প হারিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে। আর ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে মার্কিন সফরে গিয়েও বিল ক্লিনটনের ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস। সেখানে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের 'মাথা'কে চিনিয়ে দিয়েছিলেন ইউনুস। এই সবের মাঝে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কি হয়, সেদিকে নজর সবার।