সৌরজগতের বাইরেও একটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের টের পেলেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে আছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী। যা মানব ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক আবিষ্কার হতে চলেছে। জানা গিয়েছে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সৌরজগতের বাইরে কে২-১৮ বি নামে একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন দুটি গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন, যেগুলি পৃথিবীতে শুধুমাত্র জীবজগতের মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়। (আরও পড়ুন: 𒈔মন্দিরের সামনে থেকে ষাঁড় চুরি রুখতে গিয়ে 'খুন' পুলিশের চালক, জখম ২ পুলিশকর্মী)
এই দুটি গ্যাস হল, ডাইমিথাইল সালফাইড এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড। প্রধানত সামুদ্রিক শৈবালজাত জীবের মাধ্যমে তৈরি হয়। এটি ইঙ্গিত করে যে কে২-১৮ বি-তে ক্ষুদ্রজীবনের সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে গ্রহটি জীবাণুতে ভরে থাকতে পারে। তবে এখনই তারা প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়টি জোর দিচ্ছেন না বরং আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন। গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ ভারী এবং ২.৬ গুণ বড়। এটি একটি লাল বামন তারার চারপাশে বাসযোগ্য অঞ্চলে চরকিপাক খাচ্ছে, যেখানে জল থাকার সম্ভাবনা থাকে। গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে, সিংহ নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। (আরও পড়ুন: 🐼'১.৩ মিলিয়নের ভারতীয় সেনা...', কাশ্মীর নিয়ে বড় দাবি পাক সেনা প্রধানের)
♐অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট নিক্কু মাধুসূদন বলেন, 'আমরা এখন এমন একটি সময়ে পৌঁছেছি যেখানে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই বহির্বিশ্বে প্রাণের সম্ভাব্য চিহ্ন খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এটি নিশ্চিতভাবে প্রাণের প্রমাণ নয় বরং একটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত, এবং আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।' তিনি আরও বলেন,'আমরা পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছি।আমরা যদি সত্যিই এই চিহ্নগুলিকে নিশ্চিত করতে পারি, তবে তা হবে মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।'
আরও পড়ুন: ℱমুর্শিদাবাদ হিংসা নিয়ে 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' অবস্থান কংগ্রেসের, সাংসদ বললেন...
🌜গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ডিএমএস এবং ডিএমডিএস গ্যাসের ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় হাজার গুণ বেশি পাওয়া গেছে, যা প্রাকৃতিকভাবে জৈবিক উৎস ছাড়া ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটি প্রাণেরই প্রমাণ কিনা, নাকি অন্য কোনও অজৈব প্রক্রিয়াও এর নেপথ্যে থাকতে পারে।পৃথিবীর তুলনায় গ্রহটির ব্যাস আড়াই গুণ বড়। অর্থাৎ নেপচুনের মতো তার কেন্দ্রস্থলেও পুরু বরফের আস্তরণ রয়েছে, অথচ বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের আস্তরণ পাতলা। ১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যেগুলিকে এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়।২০১৫ সালে প্রথম কে২-১৮বি গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রথমবার নাসা-র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ-ই কে২-১৮ বি-র বায়ুমণ্ডলের উপর নজরদারি চালায়। তবে কে২-১৮ বি-কে নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।২০২১ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের যাত্রা শুরু হয়। এটি ২০২২ সালে কার্যক্রম শুরু করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে আগের পর্যবেক্ষণে কে২-১৮ বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।গ্রহটির বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেনে সমৃদ্ধ। সেখানে ডাইমিথাইল সালফাইড-এর অণুও রয়েছে বলে ইঙ্গিত মেলে, যা বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বাড়িয়েছে আরও। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের উন্নত প্রযুক্তির ফলে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই গ্রহ সম্পর্কে আরও বিশদে গবেষণা করতে পেরেছেন।